মো রাজু আহমেদ (রাজশাহী) জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়ন ইউপির অমৃতপুর দাখিল মাদ্রাসায় দাখিল পরিক্ষায় সবাই ফেল করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাদ্রাসাটি থেকে ১৪ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরিক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাশ করতে পারেনি।
এতে করে মাদ্রাসাটির পাঠদান নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ফলে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত বছরের দাখিল পরিক্ষায় ১৪ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ১ জন পরিক্ষার্থী অংশ্র গ্রহণ করেননি। ১৩ জন শিক্ষার্থী পরিক্ষা নিয়ে কেউ পাশ করতে পারেনি। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৩ জন পরিক্ষা দেয়। এর মধ্যে ৬ জন অংকে বাকিরা পদার্থ, রশায়ন ও কোরআন হাদিসে অকৃতকার্য হয়।
গত রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তালন্দ টু দরগাডাঙ্গা রাস্তার অমৃতপুর মোড় দিয়ে মাটির রাস্তা হয়ে যেতে হয় মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার আগে অমৃতপুর বাজার। রয়েছে বেশকিছু পুরাতন নতুন গাছ। মাদ্রাসার উত্তরে ও দক্ষিণে মাটির ঘর। পশ্চিমে একতলা পাকা ভবন। পাকা ভবনটি অফিস কক্ষ। নেই কোন বিজ্ঞানাগার ও লাইব্রেরি।
সেখানে শিক্ষকরা বসে ছিলেন। কিন্তু সুপার ছিলেন না। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানান সহসুপার সাইদুর রহমান। তার কাছে দাখিল পরিক্ষার ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৪ জন পরিক্ষার্থী ফরম পুরন করলেও ১৩ জন অংশ নিয়েছিলেন। কেউ পাশ করতে পারেনি। কি কারনে পাশ করতে পারেনি জানতে চাইলে তিনি জানান, রশায়ন ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নেই। কিন্তু গণিতে ফেল করেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গণিতের শিক্ষক বিজ্ঞান রশায়ন বিষয়ে পাঠদান দেয়। মাদ্রাসায় হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। নবম শ্রেণীতে তিনজন শিক্ষার্থী ছিল তারা মোবাইলে গেম খেলছিল। তারাও জানান, নিয়মিত ক্লাস হয়না। এজন্য একজন শিক্ষার্থী পাশ করেননি।
সহসুপার সাইদুর রহমান আরো জানান, মাদ্রাসায় শিক্ষক রয়েছে ১৫ জন ও কর্মচারী রয়েছে ৪ জন মোট ১৯ জন। এবতেদায়ীসহ ১৫ জন শিক্ষক আছে। ৪ জন শিক্ষক নেই। বিজ্ঞানে একজন, বিপিএড একজন ও সহকারী মাওলানা ২ জন প্রয়োজন। বিশেষ করে এলাকার অভিভাবকরা মাদ্রাসায় ছেলে মেয়েদের দিতে চাই না। হাফেজ খানায় পড়ে তারাই পরিক্ষা দেয়। তারা হেফজ করে, ক্লাশ করার সময় পায় না। শুধু রেজিষ্ট্রেশন করে রাখে এবং পরিক্ষায় অংশ নেই। আবার দুএকজন নিয়মিত শিক্ষার্থী থাকলেও তারা বাহিরে কাজ করে। কেউ নোট গাইড নিতে চায় না। এভাবেই চলে আসছে প্রতিষ্ঠান টি।
বাজারে এক ব্যক্তি জানান, শিক্ষকরা নিয়োমিত মাদ্রাসায় আসেনা। যে দুএকজন আসে তারা বাজারে পান খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি কারো নজর নেই। প্রধান তো কখন কোথায় থাকে বলা মুসকিল। এসব শিক্ষকদের বিল বেতন বন্ধ করলে জব্দ হবে। কারন ক্লাশ নিলেও বেতন না নিলেও বেতন পায়। আর শিক্ষা অফিস থেকে কোনদিন কেউ দেখতেও আসেনা।
মাদ্রাসার সুপার আব্দুল বারীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি রাজশাহী মেডিকেল যাচ্ছি। আপনি নাকি মেডিকেলে ভর্তি আছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ভর্তি হতে হবে মনে হয়। সব পরিক্ষার্থী কিভাবে ফেল করেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এসব বিষয়ে পরে কথা বলবো। সোমবার কয়েকবার ফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি বাবুল হোসেন জানান, সুপার অসুস্থ, আমি এসব বিষয়ে দুবার মিটিং করেছি। ফেল করেছে এটা দু:খ্যজনক।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান জানান, সুপার ফাঁকি বাজ, সে মাদ্রাসায় যায় না। পরিক্ষা কেন্দ্রে একটু কড়া কড়ি হয়েছে আর সবাই অংকে ফেল করেছে। এর দায় সুপার আব্দুল বারীর। তার সব সময় অসুখ। আর স্বৈরাচার সরকারের সময় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানভীরের কেমন আত্মীয় হয় এজন্য আরো ফাঁকি মারত। আর দেশকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা ছিল সাবেক শিক্ষা মন্ত্রীর। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যেখানে লিখা দরকার সেখানে দেয়া হবে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমানের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি