উত্তম চাকমা মহালছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধিঃ
"পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জুম্মো স্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্র বোকাবেলা করার জন্য ছাত্র - যুব ঐক্য গড়ে তুলুন,, এই প্রতিবাদ্য খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা মুবাছড়ি ইউনিয়নে জুম্ম জাতীয় চেতনার অগ্রদূত মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা'র ৮৬তম জন্ম বার্ষিকীতে-কেক কেটে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৫ই সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১.০ টায় সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মজাতির মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা'র ৮৬তম জন্ম বার্ষিকীতে-কেক কেটে এক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয় মনাটেক মংস্য অফিস মিলনায়তনে পাবর্ত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি মহালছড়ি ও নানিয়ার চর থানার কমিটি উদ্যাগে।
এ সময় উক্ত অনুষ্ঠানে সঞ্চলনায় ছিলেন রিটেন চাকমা ও সভাপতিত্বে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি মহালছড়ি থানার কমিটি সভাপতি নীল রঞ্জন চাকমা, প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন থুইহলাঅং মারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটি সহ- সংগঠনিক সম্পাদক, বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন শোভাকুমার চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি সভাপতি, উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি ও নানিয়ার চর থানার কমিটি সদস্যসহ উপস্থিত অত্র এলাকার যুব কমিটি ও মহিলা যুব কমিটি সদস্য এবং মহালছড়ি ইউপি সদস্য গ্রামপ্রধান সহ স্হানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথিসহ বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সদস্যরা সন্টোসময় চাকমা,রুপম দেওয়ান, বিপুল চাকমা, মল্লিকা চাকমা, ইউপি সদস্য উসাপ্রু মারমা,এবং ক্যাসিং মারমা প্রমূর্খ।
বক্তারা বলেন এমএন লারমা নীতি আদর্শ সর্ম্পকে তুলে ধরেন রাঙ্গামাটি শহরের নানিয়ার চর উপজেলা বুড়িঘাটের মহাপ্রুম গ্রামের জন্ম গ্রহন করেন মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, ছোট একটি নদী ও গ্রামের নাম মহাপ্রুম।আজ সেই গ্রাম মহাপ্রুম কাপ্তাই হৃদের জলে বিলীন।
এই মহাপ্রুম গ্রামেই জুম্ম জাতির জাগরণের অগ্রদূত, মহান দেশপ্রমিক নিপীড়িত মানুষের ঘনিষ্ট বন্ধু কঠোর সংগ্রামী, ক্ষমাশীল, চিন্তাবিদ, জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু) ১৯৩৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর এই দিনে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম চিত্ত কিশোর চাকমা সেই গ্রামেরই জুনিয়র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি একজন শিক্ষাবিদ, ধার্মিক ও সমাজসেবী। স্নেহময়ী মাতা পরলোকগতা সুভাষিণী দেওয়ানও একজন ধর্মপ্রাণা সমাজ হিতৈষীনি ছিলেন।
মহান নেতা এম এন লারমার দুই ভাই ও এক বোন। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাধের ফলে জন্মস্থানের বসতভিটা জলে ডুবে যায় এবং পানছড়িতে নববসতি স্থাপন করেন। এম এন লারমা মাতা পিতার তৃতীয় সন্তান। তাঁর একমাত্র বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা (মিনু) সবার বড়। তিনিও বেশ শিক্ষিত। বড় ভাই শুভেন্দু প্রবাস লারমা (বুলু) ১০ই নভেম্বর মর্মান্তিক ঘটনায় শহীদ হন। শহীদ শুভেন্দু লারমা রাজনৈতিক জীবনে একজন সক্রিয় সংগঠক, বিপ্লবী ও একনিষ্ঠ সমাজ সেবক ছিলেন।
এমএন লারমা জনসংহতি সমিতির একজন নেতৃত্ব স্থানীয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শান্তিবাহিনী গঠনে তাঁর অবদান ও ভূমিকা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ১০ই নভেম্বর ১৯৮৩ সালে মর্মান্তিক ঘটনায় এম এন লারমা শহীদ হয়।
এম এন লারমা যৌবনকালে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। বিপ্লবী জীবনের কঠোর পরিশ্রমী এবং তাঁর কথা মৃদু, কন্ঠস্বর গভীর, আচার ব্যবহার অমায়িক, ভদ্র ও নম্র। তিনি সৎ, নিষ্ঠাবান ও সুশৃঙ্খল ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুবই সাধাসিধাভাবে জীবন যাপন করতেন। তাঁর স্মরণশক্তি ছিল তীক্ষ্ণ। তিনি সৃজনশীল মেধার অধিকারী ছিলেন। কঠোর নিয়মশৃংখলা মেনে চলতে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। অসীম ধৈর্য্য, সাহস, মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও কষ্ট সহিষ্ণুতার অধিকারী ছিলেন।
মানবেন্দ্র লারমা ১৯৫৮ সালে রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম সরকারী মহাবিদ্যালয়ে আইএ ভর্তি হন এবং ১৯৬০ আইএ পাশ করেন। আইএ পাশ করে একই কলেজে বিএ তে ভর্তি হন।
তিনি অধ্যয়নরত অবস্থায় রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত করে পাকিস্তান সরকার থাকে নিরাপত্তা আইনের অধীনে ১০ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৩ সালে গ্রেপ্তার করে এবং প্রায় দীর্ঘ দুই বৎসরের অধিক কারাবাস করার পর শর্তসাপেক্ষে ৮ই মার্চ ১৯৬৫ সালে মুক্তি পান।
তিনি কর্মজীবনের শুরু করেন ১৯৬৬ সালে দিঘীনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরীতে যোগদান করেন। এরপর তিনি ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামে এক প্রাইভেট বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।তাঁর সুদক্ষ কর্ম কৌশলের ফলে ঐ বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। একজন শিক্ষক হিসাবে তিনি যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর পাঠদানের পদ্ধতি ছিল খুবই আকর্ষনীয়।
সমাজ কল্যাণ বিভাগের অধীনে থেকে একই বছরে বিএ পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে বিএড পাশ করেন এবং ১৯৬৯ সালে এলএল বি পাশ করে একজন আইনজীবি হিসেবে চট্টগ্রাম বার এ্যাসোসিয়েশনে যোগদান করেন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তরাঞ্চল হতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীসহ সকল প্রতিদ্বন্দীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এমএন লারমা বাল্যকাল থেকেই তিনি অধিকার হারা। জুম্ম জনগণের মর্মবেদনা অনুভব করতেন। প্রজা শ্রেণী যখন অভিজাত শ্রেণীর নিপীড়ন নির্যাতনে ও শোষণের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ছিল তখন নেতার পিতামহ এইসব নির্যাতন নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে সেই যুগে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ছিলেন।