এ কে আজাদ সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি:||
সিলেটের উত্তরে সীমান্তঘেঁষা গোয়াইনঘাট উপজেলা আজ দুর্নীতি, কোয়ারি সংকট, স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চনা, নাজুক যোগাযোগব্যবস্থা ও সীমান্ত চোরাচালানের কারণে অচলাবস্থার শিকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের দাবিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষক মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য—বিগত সরকার, জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কেউই এই এলাকার উন্নয়নে আন্তরিক ছিলেন না। এবার আমরা আশাবাদী, বর্তমান ডিসিই পারবেন।”
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি, হিসাবরক্ষণ, তপসিল ও নির্বাচন অফিস—প্রায় সব দপ্তরেই দুর্নীতি চলছে খোলাখুলি। সেবাপ্রত্যাশীরা ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করতে পারছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, অতীতের ইউএনও ও থানা কর্মকর্তারা পর্যন্ত এই দুর্নীতির ভাগীদার ছিলেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিনের। চিঠিতে বলা হয়, “ডাক্তার নেই বললেই চলে। স্বাধীনতার আগে থেকে আজ পর্যন্ত আমরা স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকে বঞ্চিত। ফলে সাধারণ মানুষকে সিলেট শহরের বেসরকারি ক্লিনিকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, যা আর্থিকভাবে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সালুটিকর-গোয়াইনঘাট ও হাদারপার-বিছানাকান্দি পান্তুমাই -সোনারহাট - তোয়াকুল- খাগাইল-হাতির পাড়া -ফতেপুর সড়কের ভাঙাচোরা অবস্থা স্থানীয়দের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। এসব সড়কে বড় গাড়ি চলাচল করতে পারে না, ফলে পর্যটকরা জাফলং, বিছানাকান্দির মতো দর্শনীয় স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে স্থানীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গোয়াইনঘাটের সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গরু ও অবৈধ মালামাল প্রবেশের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিজিবি, পুলিশ ও দালালচক্রের যোগসাজশে প্রতিদিন কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা চলছে। চোরাই পিকআপ ও অনুমোদনহীন ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।
কোয়ারি বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ কোয়ারিকে কেন্দ্র করে অনেকেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। চিঠিতে বলা হয়, যারা একসময় দুমুঠো ভাত জোগাড়ে হিমশিম খেতেন, শ্রমিকদের রক্ত-ঘাম দিয়ে আজ তারাই আলিশান প্রাসাদের মালিক। শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে অভাবে দিন কাটালেও রয়্যালটির নামে চলছে চাঁদাবাজি, যার সিংহভাগ যাচ্ছে প্রভাবশালী মহলের পকেটে।
চিঠিতে বলা হয়, স্যার, আপনি অতীতে র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে থেকে যে সুনাম অর্জন করেছেন, গোয়াইনঘাটবাসী আশা করছে, এখানেও আপনি শক্ত হাতে দুর্নীতি দমন ও উন্নয়নের হাল ধরবেন। বিশেষ করে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট ও হাদারপার-বিছানাকান্দি সড়ক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।