এ কে আজাদ সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১নং রুস্তমপুর ইউনিয়নের বীর মঙ্গল হাওরে সম্প্রতি ফুটেছে নতুন শাপলা বিল, যা ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকদের মন জয় করেছে। লাল–সাদা শাপলার সমাহার, শান্ত জলরাশি এবং হাওরের হালকা বাতাস প্রকৃতির প্রেমীদের মনকে মুগ্ধ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাপলা বিলের দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর, এর প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন এই মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে।
শাপলার সমাহারের মাঝেই দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, যারা আকাশে নাচে এবং হাওরের জলরাশিতে ছায়া ফেলে। বিলের পাশে স্থানীয় কৃষকরা চাষ করেছেন ফরাস, লালশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা শাক-সবজি। এই সবুজ চাষভূমি আর শাপলার রঙিন সমাহার এক অপূর্ব শান্তি ও প্রশান্তি প্রদান করে, যা পর্যটকদের মনকে ভরে দেয় আনন্দে।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, শাপলা বিলের সৌন্দর্য, হাওরের প্রশান্তি এবং স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা তাদেরকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে। একজন পর্যটক বলেন— যদিও রাস্তা কাঁচা, কিন্তু এখানে আসার পর মানুষের মন শান্ত হয়ে যায়। এখনকার মানুষের আচার-আচরণ আরও ভালো লাগছে, তারা এত সুন্দর ব্যবহার করছে।
অন্য একজন পর্যটকও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন
শাপলা বিলের দৃশ্য, হাওরের শান্ত পরিবেশ এবং স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা সবকিছুই মনকে প্রশান্তি দেয়। প্রকৃতির এই রহস্য অনুভব করা সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
বীর মঙ্গল শাপলা বিলে পৌঁছানোর জন্য চারটি জনপ্রিয় পথ রয়েছে—১/গুরকচি বাজার নিজ ধরগ্রাম হয়ে বীর মঙ্গল শাপলা বিল। ২/পীরের বাজার হয়ে বীর মঙ্গল শাপলা বিল। ৩/আহারকান্দি স্ট্যান্ড হয়ে বীর মঙ্গল শাপলা বিল।৪/ মনরতল বাজার হয়ে সুলতানপুর হয়ে বীর মঙ্গল শাপলা বিল।
যদিও এই পথগুলো সহজ এবং প্রকৃতির মাঝে ভ্রমণ উপভোগের জন্য মনোরম, কিছু কাঁচা রাস্তা ও অসমান পথের কারণে পর্যটকদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করবে। তারা ইতিমধ্যেই ডিসিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যাতে রাস্তাগুলোর বিষয়টি তুলে ধরেন এবং পর্যটকরা নিরাপদ ও সুবিধাজনকভাবে শাপলা বিল ভ্রমণ করতে পারেন।
শাপলা বিলের নৌকা ভাড়া অত্যন্ত সাশ্রয়ী মাত্র ২০০–৩০০ টাকায় পুরো বিল ঘুরে দেখা যায়। যেখানে অন্যান্য জায়গায় নৌকা ভাড়া ৮০০–১০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিলের পাশেই রয়েছে বীর মঙ্গল হাওর বাজার, যেখানে পর্যটকরা সুলভ মূল্যে স্থানীয় খাবার ও নিত্যপণ্য কিনতে পারেন।
শাপলা বিল ছাড়াও আশপাশে রয়েছে আরও কিছু পর্যটন স্পট, যা গোয়াইনঘাটকে দ্রুতই প্রকৃতি–প্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নতুন গন্তব্যে পরিণত করছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার হলে, আরও দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই শাপলা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
শাপলা বিল শুধু শাপলার রঙিন সমাহার নয়—এটি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অন্তর্গত সম্পর্কের এক মূর্ত রূপ। এখানে এসে পর্যটকরা শুধু চোখে নয়, মনে ও আত্মায়ও প্রশান্তি অনুভব করেন।