আরিফুল ইসলাম
মোহনগঞ্জ নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আবারও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষার উত্তরপত্র ফাঁস হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের ক্লিপবোর্ডে পাওয়া গেছে উত্তরপত্র।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, আগে জেলার বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হতো। সেইপ্রশ্ন নিরাপদে সংরক্ষণ করা হতো। বর্তমান প্রধান শিক্ষক স্কুলের ভেতর প্রশ্ন তৈরি করায় এমনটা ঘটেছে। এতে স্কুলের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। সেইসাথে শিক্ষকরাও বিব্রত অবস্থায় পড়েছে।
বিদ্যালয় সূত্র ও একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা চলছিল। সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিলকিস আক্তার সৈকত নামে এক শিক্ষার্থীর ক্লিপবোর্ডে প্রশ্নের উত্তরপত্র দেখতে পান। দ্রুত বিষয়টি তিনি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করেন। পরে ওই শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীর অভিভাবককে খবর দিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক। খবর জানাজানি হলে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক বিলকিস আক্তার বলেন, সকাল ১০টা থেকে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা শুরু হয়, শেষ হয় বেলা ১২ টায়। কিন্তু হলে দায়িত্ব পালনকালে সাড়ে ১১টার দিকে সৈকতের ক্লিপবোর্ডে প্রশ্নের উত্তরপত্র লেখা দেখতে পেয়ে বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মিথুন আচার্য বলেন, আজকেও প্রশ্নের হুবহু উত্তর ছাত্রের কাছে পাওয়া গেছে। সৈকত নামের ওই ছাত্রকে আমি প্রাইভেট পড়ালেও উত্তরপত্র ফাঁসের বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা নেই। বারবার উত্তরপত্র ফাঁস হওয়ায় আমরা বিব্রত অবস্থায় রয়েছি। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রফিকুজ্জামান ইদ্রিসী বলেন, বারবার উত্তরপত্র ফাঁস হওয়াটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে একপর্যায়ে বলেন, অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের কাছে একটা উত্তরপত্র পাওয়া গেছে। তবে সেটা মূল প্রশ্নের সাথে পুরো মেলেনি। কিছুটা মিল পাওয়া গেছে। পরে ওই ছাত্রকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বাকি পরীক্ষা দিতে পারবে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রের অভিভাবককে ডাকা হয়েছিলো।একজন শিক্ষককে বলা হয়েছে বিষয়টি দেখার জন্য। তবে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
উল্লেখ্য- গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকালে পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির দুটি পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে অষ্টম শ্রেণির প্রশ্ন বাতিল করে নতুন প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই আজ বৃহস্পতিবার আবারও উত্তরপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।