
মো রাজু আহমেদ (রাজশাহী)জেলা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে চলতি আলু মৌসুমে ডিলার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে এমওপি, টিএসপি ও ডিএপি সারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সার ডিলার ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে এবারও অতিরিক্ত দামে এসব সার বিক্রি করছেন। কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসিন উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি। ফলে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে সিন্ডিকেট চক্র। এসব নিয়ে ডিলার ও ব্যবসায়ীর দোকানে প্রতিনিয়ত কৃষকদের সাথে হট্টগোল ও মারপিটের ঘটনা ঘটছে বলে ভুক্তভোগি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ১৯০ হেক্টর জমি। এতোসব জমিতে চলতি ডিসেম্বর মাসে টিএসপি ২৯০ মেট্রিকটন, ডিএপি ১০৯০ মেট্রিকটন, এমওপি ৭০০ মেট্রিকটন ও ইউরিয়া ১৪৫৯ মেট্রিকটন সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা টিএসপি সারের মূল্য ১৩৫০ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে পড়ে এই সার ক্রয় করতে হচ্ছে ১৮০০-১৯৫০ টাকায়। ডিএপি সার ১০৫০ টাকার পরিবর্তে প্রতিবস্তা ১৪৫০-১৭০০ টাকায় আর এমওপি ১০৫০ টাকার স্থলে নিরুপাই হয়ে ১২৫০-১৬০০ টাকায় ক্রয় করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। পুরো উপজেলায় বিসিআইসির সার ডিলার ৯ জন। আর বিএডিসির সার ডিলার ২২ জন রয়েছে। এদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন বিসিআইসির ডিলার সমিতির সভাপতি প্রণব সাহা ও বিএডিসির ডিলার সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন। তবে, প্রণব সাহা সরকারি দামে সার বিক্রি করছেন বলে বেশি দামে সার বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন। এবিষয়ে তানোর পৌরসভার কাশিম বাজার এলাকার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, তাদের নিযুক্ত বিএডিসির সার ডিলার আব্দুল মতিন। তিনি গত নভেম্বর মাসে তার বরাদ্দের বেশির ভাগ সার কালবাজারে বিক্রি করেছেন। এজন্য চাহিদা মতো সার সরকারি দামে পাননি কৃষক। ডিসেম্বরের বরাদ্দ আজও উত্তোলন করেননি ডিলার মতিন। কিন্তু ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সার প্রতি বস্তায় ১৭০০-১৮০০ টাকা দিলে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন ডিলার মতিন ও প্রণব সাহাসহ অন্যসব ডিলাররা। এসব নিয়ে ডিলার ও ব্যবসায়ীর দোকানে প্রতিনিয়ত কৃষকদের সাথে হট্টগোল ও মারপিটের ঘটনা ঘটছে বলে ভুক্তভোগি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে, কাশিম বাজারস্থ বিএডিসির সার ডিলার আব্দুল মতিন বলেন, নভেম্বর মাসের তার বরাদ্দের সার শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যবসা ধরে রাখতে কৃষকের চাহিদার জন্য বাইরে থেকে বেশি দামে সার ক্রয় করে নাম মাত্র লাভে কৃষকের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন, দোষের কি বলে এড়িয়ে গেছেন ডিলার মতিন। তানোর অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাষ কুমার মণ্ডল বলেন, নিয়মমতে প্রতিবিঘায় ২৫ কেজি করে ৫০ কেজি ডিএপি ও এমওপি রবাদ্দ। আর কৃষক প্রতিবিঘায় ১৫০ কেজি করে ব্যবহার করছেন। কৃষকরা আলু আবাদে কোন জৈব সার ব্যবহার না করে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভর করায় চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তবে, তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন- সার ডিলারদের দোকানে অভিযান চালানো হলে আলু চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। তিনি আরও বলেন- সারা বছরের বরাদ্দ দিয়েও আলু মৌসুমের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এজন্য বাহির থেকে নিয়ে হলেও কৃষক আলু চাষ করুক এমনটি চাই উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি। এব্যাপারে তানোর উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইউএনও নাঈমা খান বলেন- উদাসিনতা নয়, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম। তাই ডিলারদের দোকানে অভিযান চালানো হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে, সারের দাম ডিলাররা যেন বেশি নিতে না পারে এজন্য বিভিন্ন ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও। ই/তা