1. live@khaborerkantho.com : খবরের কণ্ঠ : খবরের কণ্ঠ
  2. info@www.khaborerkantho.com : খবরের কণ্ঠ :
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

শরীরে ১৯টি গুলি নিয়ে কাজ করছেন পোশাককর্মী সেজান

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫৭ বার পড়া হয়েছে

 

আশরাফ উদ্দীন || কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি || দৈনিক খবরের কন্ঠ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পোশাককর্মী মোঃ সেজান মাহমুদ বলেন আমার
শরীরে ১৯টি গুলি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কারণ আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল না। তাই ঘরে বসে থাকলে পরিবার চলবে না। তাই শরীরে ১৯টি গুলি নিয়ে আবার কাজে যোগ দিয়েছি। শরীরে গুলি থাকার কারণে আমার অনেক যন্ত্রণা হয়। তার পরও কাজ করে যাচ্ছি। কাজ না করলে চলব কী করে! করুণ কণ্ঠে এমন কথাই বলছিলেন পোশাককর্মী মোঃ সেজান মাহমুদ।

গত ১৯ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে ছাত্র-জনতা ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

ওই দিন আন্দোলন হয় নরসিংদীর মাদবদী উপজেলাতেও । সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলাম ইউপি ৩ নং ওয়াডের বালুচর গ্রামের মোঃ সেজান মাহমুদ।
সেদিন গুলিতে আহত হন সেজান। তার হাত, পা, মাথাসহ সারা শরীরে প্রায় ৪১টি ছররা গুলিবিদ্ধ লাগে । তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ধারকর্জ করে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করান। সেজান মাহমুদের শরীর থেকে ২২টি গুলি বের করা হলেও এখনো ১৯টি গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এই ১৯টি গুলি শরীরে নিয়েই আবার কাজ করে যাচ্ছি সেজান বলেন। তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের পাশাপাশি মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে সেজানের বড় পরিবার। পেশায় পোশাকশ্রমিক। নরসিংদীর মাধবদী উপজেলা একটি টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকেই তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন ও গুলিবিদ্ধ হন। সেজান মাহমুদের সঙ্গে দৈনিক খবরের কন্ঠ পত্রিকা কথা হয়।

কারখানায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলছিলেন তিনি। সেজান বলেন, ‘জুলাইয়ের ১৯ তারিখ বিকেল পৌনে ৫টায় আন্দোলন চলাকালে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় একটি হাইয়েস গাড়িতে বিজিবি এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে। তখনই আমি গুলিবিদ্ধ হই। এরপর চিকিৎসা নিতে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাওয়ার পর তারা আমাকে সেখানে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেন। তার পরে আমি নরসিংদী সদর হাসপাতালে যাই। সেখানে গেলে তারাও আমাকে চিকিৎসা দেননি। এরপর আমি ঢাকা মেডিকেলে গেলে তারা যখন জানতে পারেন আমি নরসিংদীর মাধবদী উপজেলাতে গুলি খেয়েছি, তখন তারা আমাকে কোনো চিকিৎসা দেননি। এরপর আমার প্রতিষ্ঠানের মালিক ও আমার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।’

চিকিৎসায় শরীরে থাকা ছররা গুলি অপসারণের বিষয়ে সেজান বলেন, হাসপাতালে এ পর্যন্ত অপারেশন হওয়ায় আমার পরিবারের সদস্যরা ২ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। ওষুধ কিনতে, যাতায়াত ভাড়া দিতে,আনুষঙ্গিক খরচসহ, আমার বন্ধুবান্ধব অনেক সহযোগিতা করেছেন।’

গুলিবিদ্ধ শরীরের রক্তক্ষরণের বিষয়টি সেজান এখনো ভুলতে পারছেন না। সেজান বলেন, ‘অনেক রক্ত গেছে। শরীরকে রক্তশূন্য মনে হয়।

ডাক্তার বলছেন, ওষুধের পাশাপাশি অনেক ফলমূল খেতে হবে। শরীরের রক্ত পূরণ হলে আবার অপারেশন করবেন। শরীরে এখনো ১৯টি গুলি রয়ে গেছে মনে হলেই শিউরে উঠি। আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল না। তার ওপর ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গেলে চিকিৎসার ব্যয় ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেশি। এদিকে সরকারিভাবে চিকিৎসা পাচ্ছি না। প্রাইভেটে চিকিৎসার খরচ অনেক।’

রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা চিকিৎসাসহ নানা সেবা পেয়েছেন জানিয়ে সেজান আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের গুলিবিদ্ধ নেতা-কর্মীরা অনেক সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন। কিন্তু আমি তো কোনো রাজনৈতিক দল করি না। এ জন্য এখন পর্যন্ত আমার চিকিৎসায় কোনো সহায়তা পাইনি। আমার শরীরে থাকা ১৯টি গুলি বের করতে যদি কেউ সহায়তা করতেন, তাহলে খুব শান্তি পেতাম। কারণ ইতোমধ্যে আমার বাবা, ভাই, বোন সবাই ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি অনেক ধারদেনা করে আমার চিকিৎসা করিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট