নিজস্ব প্রতিবেদক
“মিথ্যা কখনো সত্যকে দমিয়ে রাখতে পারে না—সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ হয়।”
এভাবেই নিজের কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাস মেশানো কষ্টের কথা বলছিলেন নবীগঞ্জ উপজেলার যুবক মো. সুহেল (২৫), যিনি স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলায় ৩ বছর কারাভোগের পর অবশেষে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বেতাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুহেলের জীবনে এই অন্ধকার অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল ভারতের কলকাতায়। সেখানে একটি সুপার শপে চাকরিরত অবস্থায় তার পরিচয় হয় পাবনার মেয়ে লাকীর সঙ্গে। অল্পদিনেই তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং লাকী প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুহেলকে কৌশলে কোর্ট ম্যারেজে বাধ্য করেন।
কিন্তু বিয়ের পরই সুহেল জানতে পারেন, লাকী পেশাদার যৌনপেশায় জড়িত। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রেখেই তিনি সুহেলকে বিয়েতে প্ররোচিত করেন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। লাকী প্রায়ই গভীর রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতেন এবং বিভিন্ন সময় হুমকি ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে সুহেলের পরিবারে অস্থিরতা তৈরি করতেন।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন মাত্র ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তানকে সামনে রেখে লাকী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুহেলসহ আরও চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগ রয়েছে, মামলাটি মীমাংসার শর্ত হিসেবে তিনি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। মামলার অপর চার আসামির কাছ থেকে লাকী এক লাখ করে মোট চার লাখ টাকা আদায় করে তাদের জামিন করান। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতায় থাকা সুহেল এই দাবি মানতে রাজি না হওয়ায় তাকে দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে থাকতে হয়।
অবশেষে পরিবারের টানা প্রচেষ্টায় মামলাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। দীর্ঘ শুনানি ও তদন্ত শেষে আদালত নিশ্চিত হন, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা। সাক্ষ্য ও প্রমাণে অসঙ্গতি থাকায় হাইকোর্ট সম্প্রতি সুহেলকে জামিন প্রদান করেন।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সুহেল বলেন,
“আমি কোনো অপরাধ করিনি। প্রেম, বিশ্বাস আর বিয়ের নামে প্রতারণার শিকার হয়ে আমাকে তিনটি বছর জেলের অন্ধকারে কাটাতে হয়েছে। পাবনার লাকী নামে ওই নারী মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার জীবন ধ্বংস করেছে। সে একজন প্রতারক এবং নীতিহীন নারী। আমি আদালতের কাছে এই মিথ্যা মামলার সঠিক বিচার দাবি করছি।”