1. live@khaborerkantho.com : খবরের কণ্ঠ : খবরের কণ্ঠ
  2. info@www.khaborerkantho.com : খবরের কণ্ঠ :
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ন

সিলেটের সাদা পাথরে ৫কোটি ঘনফুট পাথর লুট,৩৫হাজার ঘনফুট উদ্ধার!

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

 

এ কে আজাদ: সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি:||

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথরে দীর্ঘ এক বছর ধরে লাগামহীনভাবে পাথর লুটপাট চলছিল। এর ফলে পর্যটন এলাকাটি এখন বালুময় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ঘনফুট পাথর লুট করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সিলেট জেলা বিএনপি, যুবদল, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা উদাসীন ছিলেন। শুধু গত দুই মাসেই প্রায় দুইশত কোটি টাকা মূল্যের দেড় কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে। পাথর লুটের ঘটনায় বিএনপি ইতোমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করেছে এবং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই অভিযোগে ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. দুলাল মিয়া দুলাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, এই লুটপাটের সঙ্গে পশ্চিমপাড়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন এবং পূর্বপাড়ে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসলে গত ১৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৯ সদস্যের একটি দল সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করে লুটপাটের সত্যতা পায়। দুদকের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমুস সাদাত জানান, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়দের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসনের দায় সবচেয়ে বেশি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের মাহমুদ আদনান অবশ্য নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলেছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্পেশাল টাস্কফোর্সের দল সেখানে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করে।

এদিকে, গত মঙ্গলবার সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদেরকে রবিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের অভিযোগে কমিশন ইনফোর্সমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন নবী হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছেন। রিটে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

লুটপাট ঠেকাতে এবং চুরি হওয়া পাথর ফিরিয়ে আনতে গত বুধবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো—জাফলং ও সাদাপাথর এলাকায় যৌথবাহিনীর ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন, অবৈধ ক্রাশিং মেশিন বন্ধে অভিযান, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার এবং চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে গত বুধবার রাত থেকে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৩০টি পাথরবোঝাই ট্রাক জব্দ করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযানে প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা। একটি সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত পাথর ধলাই নদীতে ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে, যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট