মো:আনোযারুল কবীর স্বপন
দিনাজপুর বিরামপুর প্রতিনিধি :
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের চকদূর্গা গ্রাম বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ইঁদুর নিধনের জন্য গর্তে গ্যাস ট্যাবলেট দিতে গিয়ে বিষধর সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৫৫ বছর বয়সী মুক্তার হোসেন, এলাকায় একজন টিন মিস্ত্রী হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
এলাকাবাসির বরাত দিয়ে জানা যায়, সকালে বাড়ির দেয়ালের ধারে ইঁদুরের গর্তে গ্যাস ট্যাবলেট দিতে গিয়ে গর্তে থাকা সাপ তাকে কামড় দেয়। হঠাৎ ব্যথা অনুভব করে আতঙ্কিত মুক্তার চিৎকার করেন। পরে নিজে গোসল করে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর চোখে ঝাপসা দেখা দিলে দ্রুত তাকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসক অবস্থা গুরুতর দেখে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মুক্তার হোসেন ছিলেন মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। পরিশ্রমী এই টিন মিস্ত্রী দিনমজুরির মতো খাটাখাটনি করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে—সম্পূর্ণ পরিবারই তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। হঠাৎ মৃত্যুতে পরিবার এখন দিশেহারা। শোকে কাতর স্ত্রী বারবার বলছিলেন, “এখন আমাদের দেখবে কে?”মুকুন্দপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, মুক্তার ভাই ছিলেন শান্ত ও সৎ মানুষ। যেখানেই ডাক পড়ত, সেখানে ছুটে যেতেন টিনশেডের কাজ নিয়ে। হঠাৎ এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।”
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা ও শরৎকালে গ্রামে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। বিশেষ করে পুরনো মাটির ঘরের গর্তে সাপ লুকিয়ে থাকে। সাপের কামড়ের পর দ্রুত চিকিৎসা না দিলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।মুকুন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন পরিবারের আশ্রয়দাতা মানুষকে সাপ কেড়ে নেওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক। গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং উপজেলা পর্যায়ে সাপের কামড় প্রতিরোধে জরুরি চিকিৎসা সহজলভ্য করতে হবে।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক বলেন, সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হাসপাতালে এলে চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু অনেকেই ঝাড়ফুঁক বা তাবিজ-কবজের পেছনে সময় নষ্ট করেন। এতে অমূল্য প্রাণ ঝরে যায়।মুক্তারের মৃত্যুতে চকদূর্গা গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া। গ্রামবাসীর চোখে অশ্রু, মুখে একটাই প্রশ্ন—এমন মৃত্যু কি হওয়া উচিত ছিল?
এদিকে, বিরামপুর উপজেলার হাসপাতাল ও আশেপাশের চারটি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলেও, এখানে সাপে কামড়ানো রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম (প্রতিষেধক টিকা) নেই। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।