নুরুল আলম সিকদার
স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার
১০/৯/২০২৪ ইং
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সামরিক জান্তার তুমুল লড়াইয়ে প্রাণে বাঁচতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকছে। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী এ রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়। এদের একটি বড় অংশ টেকনাফ পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছে। কেউ কেউ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।গত সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা ও লোকালয় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। পৌর শহর ও আশপাশে ভাড়া দেওয়ার মতো বাড়ির সংখ্যা শতাধিক। এর প্রায় সবটাতেই এখন রোহিঙ্গা ভাড়াটিয়া। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, প্রতিটি এলাকা রোহিঙ্গায় ভরে গেছে।
তবে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকেছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-রোহিঙ্গা নেতাদের ভাষ্যমতে, রাখাইনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আধা লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নতুন করে ঢুকেছে।কয়েক দিন আগে রাখাইনের মংডুর নয়াপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে টেকনাফে ঢুকেছে ফিরোজ কামাল ও তার পরিবার। গোদারবিলে একটি ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছে তারা। টিনশেড ছয় কক্ষের ওই ভাড়া বাসায় আরও দুটি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে।
ফিরোজ কামাল বলেন, ‘রাখাইনে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি যাচ্ছে। সেখানে থাকার অবস্থা নেই। খাবার নেই, থাকার ঘর নেই, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির যুদ্ধে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু, নারীসহ বহু মানুষ। বিশেষ করে সীমান্তে জড়ো হওয়া লোকজনের ওপর ড্রোন হামলা হচ্ছে। এতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর ভয়ে নৌকায় নাফ নদ পেরিয়ে এপারের টেকনাফের বরইতলী সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছি। আমাদের সঙ্গে আরও ১৪ জন রোহিঙ্গা ছিল। স্থানীয় দালাল ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। ক্যাম্পে থাকার জায়গা না পেয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছি। মাসে ৪ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হচ্ছে। বিদেশে স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি।’নুর শাহেদ নামে আরেক রোহিঙ্গা টেকনাফের শিলবনিয়া পাড়ার এক প্রবাসীর বাড়িতে উঠেছেন পরিবার নিয়ে। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে সুদাপাড়া গ্রামে জান্তা-আরাকান আর্মির মধ্য ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। আমরা এখানে পালিয়ে এসেছি। এখানে এক স্বজনের বাড়িতে উঠেছি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যাওয়ার জন্য ভাবছি। আমার মতো অনেকে এখানে গ্রামগঞ্জে এবং ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার একটি বড় অংশ আশ্রয় নিয়েছে ভাড়া বাসায়। টেকনাফের শিলবনিয়া পাড়া, নাইট্যংপাড়া, গোদারবিল, পুরান পল্লানপাড়া, উপজেলা, নাজিরপাড়া, সাবরাং, দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, কায়ুখখালী পাড়া, ইসলামাবাদ, মৌলভীপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, হাতিয়ার ঘোনা, নতুন পল্লানপাড়া ও অলিয়াবাদে ভাড়াটিয়া হিসেবে রোহিঙ্গা পরিবারের দেখা মিলেছে।