
রাজবাড়ী প্রতিনিধি প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টায় হিন্দু বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ২ যুবক’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
গ্রেফতার কৃতরা হলেন, পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের জাগির কয়া গ্রামের মোঃ আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ ফরহাদ হোসেন সোহাগ (৩০) ও একই ইউনিয়নের জোনা গ্রামের অমরেন্দ্রনাথ বালার ছেলে অসিম বালা ওরফে অসিত (২০)।
এর আগে গত শনিবার (১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পাট্টা জোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমোর কুমার দাসের বাড়িতে চার জন অস্ত্রধারী ডাকাত মুখোশ পরে প্রবেশ করে। বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। এসময় ওই শিক্ষককের স্ত্রী ও ছেলে বাধা দিতে গেলে তাদের মারপিট করে। পরে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঘরে রাখা এক লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। এসময় মেয়ের ব্যবহারের একটি মোবাইল ফোন ও নিয়ে যায় ডাকাত দল।
একই রাতে পাশের এলাকা দক্ষিণ বিশ্বাসের মাজাইল গ্রামের চানাচুর ব্যবসায়ী অখিল প্রামাণিকের বাড়িতেও একদল অস্ত্রধারী ডাকাত মুখোশ পরে প্রবেশ করে। অখিল কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গচ্ছিত ২০ হাজার টাকা ডাকাত দল নিয়ে যায়।
এর ঠিক দুই রাত পর গত সোমবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে জোনা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা জিতেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের বাড়িতেও অস্ত্রধারী একদল ডাকাত প্রবেশ করে। ডাকাত দল প্রথমে জিতেন্দ্রনাথ বিশ্বাস কে মারপিট করে। পরে ঘরের ভেতর থেকে গচ্ছিত ৪০ হাজার টাকা ও ২ টি পিতলের রাধাগোবিন্দ মূর্তি নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমোর কুমার দাসের স্ত্রী বলেন, কিছুদিন পর আমার মেয়ে বিয়ে। এই ঘটনা অনেকেই জানে। ডাকাতরা ভাবছে হিন্দু মেয়ের বিয়ে মানে অনেক স্বর্ণালংকার ও অনেক টাকা যৌতুক দিবে। সেই ভেবে রান্না ঘরের পেছন দিয়ে টিনের বেড়া টপকে বাড়ির ভেতর ৪ জন মুখোশ পরে প্রবেশ করে। এসময় বাড়ির চারপাশে আরও কিছু লোক ছিলো। তারা বোম ফুটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। আমরা সবাই বাইরেই ছিলাম। যে চার জন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা প্রথমে আমার ছেলেকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে আমাকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। আমরা প্রাণ ভয়ে সব কিছু দিয়ে দেই।
চানাচুর ব্যবসায়ী অখিল প্রামাণিক বলেন, আমার মেয়ে বিয়ে। আমি খুব গরীব মানুষ। ধারদেনা করে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলাম। রাতে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার সব টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জিতেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আমার বাড়ির পাশে সমোর মাস্টারের বাড়ি। সেই বাড়িতে ডাকাতি হওয়ার ৩ দিন পর আবার আমার বাড়িতে আগ্নেয় অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাকাতি করলো। ডাকাতরা আমাকে মারপিটও করেছে। প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই একের পর এক এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য অতুল সরকার বলেন, সমোর কুমার দাস এবং জীতেন্দ্রনাথ দু’জনেই আমার ওয়াডের বাসিন্দা। ঘটনার পর আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তবে মুখোশ পরা থাকায় তারা কেউ’ই ডাকাত’দের সনাক্ত করতে পারেনি। এই ইউপি সদস্য জানান, পাট্টার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’র বতর্মান বেশ অবনতি ঘটেছে। এখন রাত হলেই মানুষ ডাকাত আতংকে থাকে।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির সাথে জড়িত দুই জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না।
অতুল সরকার /রাজবাড়ী প্রতিনিধি
৫/১১/২০২৫-০১৭১১০৫০৯৩৭