উত্তম চাকমা মহালছড়ি, (খাগড়াছড়ি)ঃ
চলছে ভাষার মাস ২১শে ফেব্রয়ারি দেশের সব শহীদ মিনারে চলছে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন কাজ। ২১ ফেব্রয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ২১ ফেব্রুয়ারির সকালে ফুলে ফুলে সেজে উঠবে শহীদ মিনারের বেদি। প্রভাতফেরিতে অংশ নেবে কলেজ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তবে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই আছে মনোকষ্টে। প্রাথমিক , মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহালছড়ি উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬২ টা যার মধ্যে মাত্র তিন টা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। মহালছড়ি উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫টি শহীদ মিনার আছে মাত্র আট টি তে বাকি সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নাই। উপজেলা সদরে একটা দাখিল মাদ্রাসা থাকলেও নেই শহীদ মিনার, মহালছড়ি উপজেলার তিনটি কলেজ থাকলেও একটিতেও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নাই।
মহালছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মহালছড়ি উপজেলা ৬২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যার মধ্যে তিনটি ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ শহীদ মিনার আছে।
উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে-মহালছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৭টি প্রাথমি বিদ্যালয়ের ১টিতে, মুবাছড়ি ইউনিয়নে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১টিতে, কেংঘাট ইউনিয়নে ১৯টির মধ্যে ০টিতে, মাইসছড়ি ইউনিয়নে ১৪টির মধ্যে ১টিতে শহীদ মিনার আছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নে ২০০৬ সালে স্থাপিত হয় মহালছড়ি শিশু মঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এই স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না নিজ ক্যাম্পাসে।
এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত জানান, স্কুলে বর্তমানে ৬০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে হয়। আগামীতে স্কুলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে জোড় দাবি জানানো হবে।
এই স্কুলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছামিয়া জানান, শহীদ মিনার না থাকায় কেউ স্কুলে এসে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না, আমাদের কে উপজেলা শহীদ মিনার যেতে হয়।
মহালছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ আমার জানা মতে শহীদ মিনারের জন্য সরকারি পর্যায়ে বাজেট আসে না। স্থানীয় পর্যায়েও কেউ যদি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চায় তাহলে করতে পারে।
মহালছড়ি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ সোহাগ বলেন, আমাদের কলেজে শহীদ মিনার নেই। আমরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।
৩৭ বছরের মহালছড়ি কলেজ ক্যাম্পাসে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার না থাকায় আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা আশা করছি কলেজ কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ মিনারে নির্মাণ কাজ শুরু করবেন।
মহালছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদুল আলম বলেন, অতীতে অর্থ ও পরিকল্পনার অভাবে কলেজ আঙিনায় ৩৭ বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণ করা যায়নি এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। ২০১৮ সালে মহালছড়ি কলেজ কে সরকারি ঘোষণা করা হয়, সরকারি বরাদ্দ পেলে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মহালছড়ি উপজেলা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক তুষার কান্তি দাস বলেন বলেন, ‘১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারের প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্মকে ২১ ফেব্রুয়ারি কেন পালন করা হয় সে সব বিষয়ে জানতে হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।