
পলাশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ড্রেজার (খনন যন্ত্র) দিয়ে খাল খনন করায় পাশের সড়ক ভেঙে পড়েছে ওই খালের মধ্যে।
এতে দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ওই উপজেলার মাঝবাড়ি ও বংকুরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে।
এছাড়া ওই সড়ক ব্যবহার করে স্থানীয় মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়দের দাবি ড্রেজার (খনন যন্ত্র) দিয়ে খনন না করে পানি সেচ দিয়ে খালের মাটি খনন করলে ভাঙ্গন আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২৪ সালে ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ ১৭ টাকা চুক্তি মূল্যে
গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট খাল খননের কাজ শুরু হয়।
দরপত্র অনুযায়ী খালের পানি সেচ দিয়ে খনন কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদের প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড খালে পানি সেচ না দিয়েই কাজ শুরু করেন। ড্রেজার দিয়ে ওই খাল খনন করায় দুই পাড়ের সড়ক ভেঙে খালের মধ্যে পড়ছে। এতে সড়ক দিয়ে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে নিয়ে চলছে ৬১ নং মাঝবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বংকুরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
গত রবিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ- কোটালীপাড়া খালের পূর্ব পাড়ে হিরণ ইউনিয়নের বংকুরা গ্রামে বীর বিক্রম হেমায়েত উদ্দিন সড়ক গাছসহ খালের মধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে। ওই সড়কের অধিকাংশ খালের মধ্যে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে পাশ দিয়ে চলাচল করছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী -হিরণ, কাকডাঙ্গা -দেওপুরাসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নয়টি খাল পুন খননের কাজ শুরু হয় । ওই সব খাল পানি সেচ না দিয়েই পানির মধ্যে এস্কেভেটর দিয়ে লোক দেখানো কাজ করে বিল উত্তোলন করছে ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠান। এতে সহযোগিতা করছে সংশ্লিষ্ট কাজের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান ও প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ।
চুক্তিবহীর্ভূত কাজে ওইসব এলাকার জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকে বলছেন লোকদেখানো কাজ করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
বংকুরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, এই সড়ক আমাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। গতকাল মোটা গাছসহ সড়ক ভেঙে পড়েছে খালের মধ্যে। এখন ওই সড়ক দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। যেভাবে খালের মধ্য থেকে মাটি তুলছে তাতে আরো অনেক জায়গা ভাঙতে পারে।
ওই এলাকার বাসিন্দার নজরুল ইসলাম শেখ বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজের সময় শুভংকরের ফাঁকি। দায়সারা কাজ করে টাকা আত্মসাৎ করছে। মেসেজ সরকারের আমলে যারা এ সকল কাজের সাথে জড়িত তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে যেসব এলাকায় কাজের কথা রয়েছে দরপত্র অনুযায়ী সঠিক নিয়মে কাজ করার দাবী জানাচ্ছি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেডের দায়িত্বে থাকা মেজবাউদ্দিন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী খালের পানি সেচ দিয়ে খাল খনন করার কথা রয়েছে। সেচ দিয়ে খাল খনন করলে দুই পাশের রাস্তা ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা আছে তাই ড্রেজার বসিয়ে খাল খনন করছি। রাস্তা যেখানে ভেঙে পড়বে আমরা সেগুলো মেরামত করে দিব।
ওই প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া কোটালীপাড়া উপজেলার জলবাধ্যতা দূরীকরণের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু কাজ চলমান আছে। যদিও ওই সকল প্রকল্প খালের পানি সেচ দিয়ে করার কথা থাকলেও ভৌগোলিক কারণে আমরা সেটা করতে পারছি না। আমি গতকাল জানতে পেরেছি ড্রেজার দিয়ে খাল খনন করায় একটি জায়গা রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলছি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করে।
উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুপ্তা হক বলেন, রাস্তা ভেঙ্গে পড়ার সংবাদ শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।